রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৪

সেপ্টেম্বর থেকে টানা কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি



সরকারবিরোধী আন্দোলনে সেপ্টেম্বর থেকে টানা কর্মসূচিতে যাচ্ছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিপহেলা সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠাবাষির্কী পালনের পর থেকে ছোট ছোট কর্মসূচি দিয়ে সামনে এগুতে চাইছে দলটি
গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকায় বেশ কয়েকটি পথসভা করা হবেএতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াএর মধ্যে দাবি আদায় না হলে ঢাকায় মহাসমাবেশ করে সরকারকে আল্টিমেটাম দেয়া হবে
এর মধ্যে এ মাসে কিছু কর্মসূচি পালন করবে বিএনপিআগামী ১৬ আগস্ট শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচি পালনএ ছাড়া আগামী ১৯ আগস্ট জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, হত্যা, নির্যাতনের প্রতিবাদে সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে

বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির এক স্থায়ী কমিটির সদস্য দ্য রিপোর্টকে বলেন, বৈঠকে আমরা বেশ কিছু বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিআমাদের কিছু কর্মসূচি আছে, এগুলা পরে ঘোষণা করা হবে

তিনি বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ দলআমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাস করিকোনো সন্ত্রাসে বিশ্বাস করি নাআমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হলে হরতালসহ আরও কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে বাধ্য হব
এর আগে, গুলশানে রবিবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠক চলাকালে সাংবাদিকদের মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্প্রচার নীতিমালা, গাজায় ইসরায়েলী আগ্রাসন বন্ধের দাবি, তোবা গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ও বোনাসের দাবি, দলের স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে অন্যায়ভাবেআটকের প্রতিবাদ ও জামিনের দাবি তুলে ধরেন
এ সময় তিনি বলেন, আমাদের আরও কিছু সিদ্ধান্ত আছে তা পরে জানানো হবে
খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ড. আর এ গণি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, বেগম সারোয়ারি রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান

বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০১৪

আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা// বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোর ঘুঁটি সাজাতে ব্যস্ত সরকার

শোকের মাস আগস্টে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীকে মাঠেই নামতে দেবে না আওয়ামী লীগ। এজন্য মাসজুড়েই আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল ও বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছে দলটিযাযাদি রিপোর্ট বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সরকার। আন্দোলনের নামে যাতে কোনো ধরনের নাশকতা না হয় এজন্য একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাকেও মাঠে নামানো হয়েছে।
গোয়েন্দারা ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগরে থানাভিত্তিক তালিকাও প্রস্তুত করেছেন। আর এ তালিকা ধরেই মাঠে কাজ করছে গোয়েন্দা সংস্থা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী নাশকতা জনগণই মোকাবেলা করবে। তারপরও জানমালের নিরাপত্তা দেয়া যেহেতু পুলিশের কাজ এজন্য পুলিশও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। নাশকতা করতে চাইলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
তালিকার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, নাশকতায় সম্পৃক্তদের তথ্য সংগ্রহে ইতোমধ্যে গোয়েন্দারা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন।
গোয়েন্দা সূত্রমতে, ঢাকা মহানগরে আন্দোলন প্রতিহত করার লক্ষ্যে থানায় থানায় তিন ধরনের তালিকা হয়েছে। প্রথম তালিকায় সক্রিয় সংগঠক ও অর্থ জোগানদাতা হিসেবে রয়েছে বিএনপি নেতাদের নাম। দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে বোমা প্রস্তুতকারী ও বোমা হামলাকারীদের নাম। তৃতীয় তালিকায় আছে কারাবন্দি, জামিনে মুক্ত ও পলাতকদের নাম।
সূত্রমতে, সমপ্রতি গঠিত বিএনপির মহানগর কমিটি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বেশকিছু নেতার নামও তালিতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কারণ ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি। এর বাইরে একটি বিশেষ তালিকা তৈরি করছে গোয়েন্দারা। যেখানে বিএনপির শরিক ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের নাম রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিএনপির আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেই শুরু হবে গ্রেপ্তার অভিযান। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, বিএনপি নেতাদের নামে তালিকা তৈরি হয়নি। যারা পেশাদার বোমাবাজ ও নাশকতাকারী শুধু তাদেরই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
জানা গেছে, বিএনপি, জামায়াত, যুবদল, ছাত্রদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের যেসব নেতার নামে একাধিক মামলা রয়েছে, যেসব নেতা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন তাদেরও থানাভিত্তিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সূত্রের দাবি, বিএনপি জোট আন্দোলন শুরু বা কর্মসূচি ঘোষণা করা মাত্রই এসব নেতাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাবে ডিএমপি। এজন্য তালিকাভুক্ত নেতাদের ঈদের পরদিন থেকেই নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র ও যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম জানান, যারা ইতোপূর্বে বিভিন্ন থানায় নাশকতা করেছে তারা তাদের একটি তালিকা হালনাগাদ করেছেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর যারা নাশকতা করেছে তাদেরই মূলত হালনাগাদ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ তালিকা আগেও ছিল। এখন শুধু হালনাগাদ করা হয়েছে। যাদের নাম তালিকায় রয়েছে তারা সবাই তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। এদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক নাশকতার মামলাও রয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, রমজান মাসে বিএনপি জোটের সরকার পতনের হুমকির পর থেকেই আন্দোলন মোকাবেলায় সরকার নানা কৌশল নেয়। সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশ প্রশাসনকে পরিকল্পনা মতো ঢেলে সাজানোর কাজও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সেপ্টেম্বরেই হতে পারে ঢাকা মহানগর আ.লীগের কমিটি আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও আন্দোলন মোকাবেলায় সরকারের বিশেষ নির্দেশনা পালন করছে।
সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবেলার বিষয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, বিএনপির আন্দোলন ফাঁকা আওয়াজ দিচ্ছে। তারপরও তারা যদি আবারো বায়তুল মোকাররমে আগুন দিয়ে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে চায় জনগণ বসে থাকবে না। আওয়ামী লীগের নেতারা চুপ থাকবে না।

আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা
এদিকে শোকের মাস আগস্টে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীকে মাঠেই নামতে দেবে না আওয়ামী লীগ। এজন্য মাসজুড়েই আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল ও নানা কর্মসূচি দিয়েছে দলটি।
কর্মসূচি পালনে নানা দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ লক্ষ্যে গত শনিবার তিনি আওয়ামী লীগ সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠন নিয়ে যৌথসভা করেছেন।
বৈঠকের পর সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী পালনের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাসমূহের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
একই সঙ্গে জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব শাখার নেতাকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি স্মরণ ও পালন করার জন্য অনুরোধ জ্ঞাপন করেছেন।
আওয়ামী লীগের মাসব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৫ আগস্ট শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা ও মিলাদ মাহফিল, ৯ আগস্ট স্বেচ্ছাসেবক লীগের আলোচনা সভা, ১২ আগস্ট আওয়ামী যুবলীগের আলোচনা সভা, এদিকে ১৫ আগস্ট সূর্যোদয়ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সর্বস্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করবে আওয়ামী লীগ। সকাল ৭টায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত ধানম-ির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
এছাড়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং নগরীর প্রতিটি শাখা থেকে শোক মিছিলসহ বঙ্গবন্ধু ভবনের সম্মুখে আগমন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল করবে সংগঠনটি। ১৬ আগস্ট আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা করবে। ১৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা, ১৮ আগস্ট জাতীয় শ্রমিক লীগ, ১৯ আগস্ট আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আলোচনা সভা, ২০ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ, ২৩ আগস্ট যুব মহিলা লীগ, ২৫ আগস্ট তাঁতি লীগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজে ২৬ আগস্ট স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ৩০ আগস্ট মহানগর আওয়ামী লীগ, ৩১ আগস্ট ছাত্রলীগের আলোচনা সভা।

মানববন্ধন-জনসভা দিয়েই শুরু বিএনপির কর্মসূচি

কাফি কামাল: জনসভা ও মানববন্ধন দিয়েই শুরু হচ্ছে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলন। সারাদেশের নেতাকর্মীদের আরও উজ্জীবিত এবং সর্বস্তরের জনগণকে এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খুব শিগগির দেশের বিভাগীয় শহর ও বিভিন্ন জেলা সফর শুরু করেবেন। আগস্ট মাস এবং আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে তিনি দেশের কমপক্ষে ৮টি জায়গায় সমাবেশ করবেন।
চলতি সপ্তাহে দলের শীর্ষ নেতা, জোটের শরিক ও মহানগর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। সে বৈঠকেই চূড়ান্ত হবে আগামী আন্দোলনের ছক। প্রণয়ন করা হবে দীর্ঘ ও ¯^ল্পমেয়াদি এক গুচ্ছ সিরিজ কর্মসূচি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই ঘোষণা করা হবে সেসব কর্মসূচি। কৌশলগত কারণে আন্দোলনের সম্ভাব্য গতিপ্রকৃতি ও কর্মসূচি সম্পর্কে নেতাকর্মীদের এখনও কোন নির্দেশনা দেয়নি শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে আগামী ঈদুল আজহার আগে বাধ্য না হলে নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের বাইরে যেতে চায় না বিরোধী জোট। এ সময় দলের বিভিন্ন শাখা ও অঙ্গদলগুলোর পুনর্গঠনের মাধ্যমে সাংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থান
তৈরি ও জনসচেতনা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশবাসীকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে তাতিয়ে তুলতে চায় তারা। সেরে নিতে চায় চূড়ান্ত আন্দোলনের ওয়ার্মআপ। ঈদের ছুটিতে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। এমনকি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়ে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। তাই নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।
কয়েক মাস ধরে ঈদের পর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বড় ধরনের আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আসছে বিএনপি। রমজান মাসে কয়েকটি ইফতার পার্টিতে দেয়া বক্তব্যেও সে ঘোষণা দেন বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া। আন্দোলনকে লক্ষ্য রেখে মধ্য রমজানে ঘোষণা দেয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। ঢাকা মহানগর বিএনপিকে আন্দোলনমুখী করতে সে কমিটিতে সমš^য় ঘটানো হয়েছে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের। ঢাকা মহানগর বিএনপির প্রতিটি গ্রæপের সমান প্রতিনিধিত্ব রাখার পাশাপাশি দেখভালের জন্য রাখা হয়েছে কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে।

বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০১৪

মানববন্ধন-জনসভা দিয়েই শুরু বিএনপির কর্মসূচি

(কাফি কামাল | ১ আগস্ট ২০১৪ মানবজমিন): জনসভা ও মানববন্ধন দিয়েই শুরু হচ্ছে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলন। চলতি সপ্তাহে দলের শীর্ষ নেতা, জোটের শরিক ও মহানগর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। সে বৈঠকেই চূড়ান্ত হবে আগামী আন্দোলনের ছক। প্রণয়ন করা হবে দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি এক গুচ্ছ সিরিজ কর্মসূচি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই ঘোষণা করা হবে সেসব কর্মসূচি। কৌশলগত কারণে আন্দোলনের সম্ভাব্য গতিপ্রকৃতি ও কর্মসূচি সম্পর্কে নেতাকর্মীদের এখনও কোন নির্দেশনা দেয়নি শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে আগামী ঈদুল আজহার আগে বাধ্য না হলে নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের বাইরে যেতে চায় না বিরোধী জোট। এ সময় দলের বিভিন্ন শাখা ও অঙ্গদলগুলোর পুনর্গঠনের মাধ্যমে সাংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থান    
তৈরি ও জনসচেতনা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশবাসীকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে তাতিয়ে তুলতে চায় তারা। সেরে নিতে চায় চূড়ান্ত আন্দোলনের ওয়ার্মআপ। ঈদের ছুটিতে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। এমনকি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়ে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। তাই নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। উল্লেখ্য, কয়েক মাস ধরে ঈদের পর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বড় ধরনের আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আসছে বিএনপি। রমজান মাসে কয়েকটি ইফতার পার্টিতে দেয়া বক্তব্যেও সে ঘোষণা দেন বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া। আন্দোলনকে লক্ষ্য রেখে মধ্য রমজানে ঘোষণা দেয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। ঢাকা মহানগর বিএনপিকে আন্দোলনমুখী করতে সে কমিটিতে সমন্বয় ঘটানো হয়েছে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের। ঢাকা মহানগর বিএনপির প্রতিটি গ্রুপের সমান প্রতিনিধিত্ব রাখার পাশাপাশি দেখভালের জন্য রাখা হয়েছে কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে। নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করেই সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হবে। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। তাই ঢাকার আন্দোলনের দিকে সবার নজর রয়েছে। এবারের আন্দোলনে ঢাকা মহানগর নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ থাকবে সবচেয়ে বেশি। আগামী দিনের আন্দোলনকে ঘিরে এবার ঢাকা মহানগরকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ঈদের পরদিন মহিলা দল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেছেন, খুন, গুম, অপহরণ ও গ্রেপ্তারের কথা মাথায় রেখেই আন্দোলনের প্রক্রিয়া এখনও স্পষ্ট করা হচ্ছে না। আন্দোলন হবে অহিংস ও শান্তিপূর্ণ। তবে সরকার বাধা দিলে সেটা সহিংস রূপ নিলে তার দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। দলীয় সূত্র জানায়, সাংগঠনিক পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে শিগগিরই যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল ও মহিলা দল পুনর্গঠন করা হবে। বিএনপি সূত্র জানায়, পবিত্র ওমরাহ পালনকালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর সম্ভাব্য নতুন কমিটির ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগস্টের মধ্যেই এসব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটি ঘোষণা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
ঈদের পর আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও এখনই রাজপথে ঢেউ তুলতে চায় না বিরোধী জোট। বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, শিগগিরই শুরু হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে আন্দোলনের ওয়ার্মআপ। মূল আন্দোলন হবে ঈদুল আজহার পর। নেতারা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর বিরোধী নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন রাজপথ থেকে দূরে। দীর্ঘদিন ধরেই রাজধানীর রাজপথে বিরোধী নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না সরকার। তার ওপর দলের শীর্ষ মহল থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে ডজন ডজন মামলা। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই তাই বড় ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন কঠিন। সে পরিস্থিতি বিবেচনা করেই কর্মসূচি প্রণয়ন ও আন্দোলনের ছক কষছে বিএনপি। সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে রাজধানীতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, অনশন ও শান্তিপূর্ণ গণমিছিল কর্মসূচি আসতে পারে। এছাড়া ঢাকার বাইরে কয়েকটি জেলায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন বিরোধী জোট নেতা খালেদা জিয়া। সেসব জনসভায় সরকারের নানা ব্যর্থতা ও অনিয়মের কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেবেন তিনি। জনসভাকে কেন্দ্র করে নতুন করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আন্দোলনের প্রচারণা চালানো হবে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিকে রাজধানীতে একটি মহাসমাবেশ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে মহাসমাবেশ থেকে ঈদুল আজহার পর চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচিসহ ঘোষণা দেয়া হতে পারে। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী দুই মাস গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ সিরিজ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পার করতে চায় বিএনপি। তবে এসব কর্মসূচিতে সরকার কঠোর হলে পাল্টে যেতে পারে পরিস্থিতি। তবে নেতারা জানান, এবারের আন্দোলনে ঢাকা থেকে শুরু হবে নাকি ফের জেলা পর্যায় থেকে আন্দোলনের ঢেউ তুলে তা রাজধানীতে আছড়ে ফেলা হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। দলীয় সূত্র জানায়, সরকার আগের মতো দমন-পীড়নের পথ বেছে নিলে হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণায় দ্বিধা করবে না বিরোধী জোট। তবে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির বিষয়ে এখনও পরিষ্কারভাবে অবহিত নন নেতারা। সরকারের পাল্টা কৌশল এড়িয়ে আন্দোলনকে গণমুখী ও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতেই এ রাখঢাক। কর্মসূচি চূড়ান্ত করার পর তা বাস্তবায়নের জন্য সতর্কতার সঙ্গে নির্দেশনা পৌঁছানো হবে তৃণমূলে।
জনগণের সম্পৃক্ততায় আন্দোলনে জোর দেয়া হবে ঢাকায়Ñ ফখরুল: জনগণকে সম্পৃক্ত করেই সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই সঙ্গে এবারের আন্দোলনে রাজধানী ঢাকাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। এ জন্য ঢাকার আন্দোলনের দিকে সবার নজর রয়েছে। তাই ঢাকায় আন্দোলন হতেই হবে। এবারের আন্দোলনে ঢাকা মহানগর নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ থাকবে সবচেয়ে বেশি। আগামী দিনের আন্দোলনকে ঘিরে এবার ঢাকা মহানগরকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঈদ পরবর্তী সরকার পতনের আন্দোলন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা হলে ভালো হয়। অন্যথায় আন্দোলনের বিকল্প কোন পথ নেই। আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করা হবে। সরকারবিরোধী আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হবে জানিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, আন্দোলনের বিকল্প নেই। এবারের আন্দোলন তীব্রতর থেকে তীব্রতর হবে। জোট ও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। তাতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে। এবার তীব্র আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে।
নেতারা জেলে গেলেও আন্দোলন থামবে নাÑ আব্বাস: ওদিকে অপহরণ, খুন, গুম ও গ্রেপ্তারের কথা চিন্তা করেই বিএনপি সরকার পতন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস। সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, দলের নেতাকর্মী সবাই জেলে গেলেও ২০দলীয় জোটের আন্দোলন থেমে থাকবে না। বুধবার দুপুরে মহিলা দলের নেত্রীরা তার শাহজাহানপুরের বাসায় ঈদের শুভেচ্ছা ও আহ্বায়ক হওয়ায় অভিনন্দন জানাতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। মহিলা দলের সভাপতি নূরে আরা সাফা ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানার নেতৃত্বে মহিলা দলের শতাধিক নেতাকর্মী তার বাসায় যান। মির্জা আব্বাস বলেন, আন্দোলন হবে অহিংস এবং শান্তিপূর্ণ। তবে সরকার বাধা দিলে সেটা সহিংস রূপ নিলে তার দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। তিনি  বলেন, আগের বার যেমন আমার বাসায় হামলা করা হয়েছিল। এবার সে রকম কিছু চিন্তা করলে জনগণ তার সমুচিত জবাব দেবে। আর আন্দোলন নতুন কিছু নয়, প্রক্রিয়াধীন। খুন, গুম, অপহরণ ও গ্রেপ্তারের কথা মাথায় রেখেই আন্দোলনের প্রক্রিয়া এখনও স্পষ্ট করা হচ্ছে না। আব্বাস বলেন, সরকার অতীতে যে ভুল করেছে, তা এবার করবে না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সরকার সম্মান দেখাবে। দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ যাদের পাশে রয়েছে আশা করি সরকার তাদের প্রতি সমর্থন জানাবে। দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সবাইকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আগের কমিটি পুরোপুরি ব্যর্থÑ হান্নান শাহ: ওদিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার (অব.) হান্নান শাহ বলেছেন, ঢাকা মহানগর আগের কমিটির উপর যে অর্পিত দায়িত্ব ছিল তারা তা সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি। তারা দলকে সংগঠিত করতে পারেনি। এটা তাদের ব্যর্থতা। ঈদের পরদিন এক বেসরকারি টেলিভিশনে তিনি একথা বলেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেছেন, যেই কমিটি ছিল তাদের দায়িত্ব নিয়ে নানা কথা উঠেছে। তবে নতুন কমিটি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে তা সাময়িক। আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করা ও এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনই এখন নতুন কমিটির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।