বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০১৪

মানববন্ধন-জনসভা দিয়েই শুরু বিএনপির কর্মসূচি

(কাফি কামাল | ১ আগস্ট ২০১৪ মানবজমিন): জনসভা ও মানববন্ধন দিয়েই শুরু হচ্ছে নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির আন্দোলন। চলতি সপ্তাহে দলের শীর্ষ নেতা, জোটের শরিক ও মহানগর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। সে বৈঠকেই চূড়ান্ত হবে আগামী আন্দোলনের ছক। প্রণয়ন করা হবে দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি এক গুচ্ছ সিরিজ কর্মসূচি। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই ঘোষণা করা হবে সেসব কর্মসূচি। কৌশলগত কারণে আন্দোলনের সম্ভাব্য গতিপ্রকৃতি ও কর্মসূচি সম্পর্কে নেতাকর্মীদের এখনও কোন নির্দেশনা দেয়নি শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে আগামী ঈদুল আজহার আগে বাধ্য না হলে নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের বাইরে যেতে চায় না বিরোধী জোট। এ সময় দলের বিভিন্ন শাখা ও অঙ্গদলগুলোর পুনর্গঠনের মাধ্যমে সাংগঠনিকভাবে শক্ত অবস্থান    
তৈরি ও জনসচেতনা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশবাসীকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে তাতিয়ে তুলতে চায় তারা। সেরে নিতে চায় চূড়ান্ত আন্দোলনের ওয়ার্মআপ। ঈদের ছুটিতে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। এমনকি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়ে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া বলেছেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। তাই নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। উল্লেখ্য, কয়েক মাস ধরে ঈদের পর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বড় ধরনের আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে আসছে বিএনপি। রমজান মাসে কয়েকটি ইফতার পার্টিতে দেয়া বক্তব্যেও সে ঘোষণা দেন বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া। আন্দোলনকে লক্ষ্য রেখে মধ্য রমজানে ঘোষণা দেয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। ঢাকা মহানগর বিএনপিকে আন্দোলনমুখী করতে সে কমিটিতে সমন্বয় ঘটানো হয়েছে অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের। ঢাকা মহানগর বিএনপির প্রতিটি গ্রুপের সমান প্রতিনিধিত্ব রাখার পাশাপাশি দেখভালের জন্য রাখা হয়েছে কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে। নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করেই সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হবে। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। তাই ঢাকার আন্দোলনের দিকে সবার নজর রয়েছে। এবারের আন্দোলনে ঢাকা মহানগর নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ থাকবে সবচেয়ে বেশি। আগামী দিনের আন্দোলনকে ঘিরে এবার ঢাকা মহানগরকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ঈদের পরদিন মহিলা দল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গিয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেছেন, খুন, গুম, অপহরণ ও গ্রেপ্তারের কথা মাথায় রেখেই আন্দোলনের প্রক্রিয়া এখনও স্পষ্ট করা হচ্ছে না। আন্দোলন হবে অহিংস ও শান্তিপূর্ণ। তবে সরকার বাধা দিলে সেটা সহিংস রূপ নিলে তার দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। দলীয় সূত্র জানায়, সাংগঠনিক পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে শিগগিরই যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল ও মহিলা দল পুনর্গঠন করা হবে। বিএনপি সূত্র জানায়, পবিত্র ওমরাহ পালনকালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর সম্ভাব্য নতুন কমিটির ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগস্টের মধ্যেই এসব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নতুন কমিটি ঘোষণা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
ঈদের পর আন্দোলনের ঘোষণা দিলেও এখনই রাজপথে ঢেউ তুলতে চায় না বিরোধী জোট। বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, শিগগিরই শুরু হবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে আন্দোলনের ওয়ার্মআপ। মূল আন্দোলন হবে ঈদুল আজহার পর। নেতারা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর বিরোধী নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন রাজপথ থেকে দূরে। দীর্ঘদিন ধরেই রাজধানীর রাজপথে বিরোধী নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না সরকার। তার ওপর দলের শীর্ষ মহল থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে রয়েছে ডজন ডজন মামলা। এমন পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই তাই বড় ধরনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন কঠিন। সে পরিস্থিতি বিবেচনা করেই কর্মসূচি প্রণয়ন ও আন্দোলনের ছক কষছে বিএনপি। সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে রাজধানীতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, অনশন ও শান্তিপূর্ণ গণমিছিল কর্মসূচি আসতে পারে। এছাড়া ঢাকার বাইরে কয়েকটি জেলায় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেবেন বিরোধী জোট নেতা খালেদা জিয়া। সেসব জনসভায় সরকারের নানা ব্যর্থতা ও অনিয়মের কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেবেন তিনি। জনসভাকে কেন্দ্র করে নতুন করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আন্দোলনের প্রচারণা চালানো হবে। সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিকে রাজধানীতে একটি মহাসমাবেশ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে মহাসমাবেশ থেকে ঈদুল আজহার পর চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচিসহ ঘোষণা দেয়া হতে পারে। তারই ধারাবাহিকতায় আগামী দুই মাস গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ সিরিজ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পার করতে চায় বিএনপি। তবে এসব কর্মসূচিতে সরকার কঠোর হলে পাল্টে যেতে পারে পরিস্থিতি। তবে নেতারা জানান, এবারের আন্দোলনে ঢাকা থেকে শুরু হবে নাকি ফের জেলা পর্যায় থেকে আন্দোলনের ঢেউ তুলে তা রাজধানীতে আছড়ে ফেলা হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। দলীয় সূত্র জানায়, সরকার আগের মতো দমন-পীড়নের পথ বেছে নিলে হরতালের মতো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণায় দ্বিধা করবে না বিরোধী জোট। তবে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির বিষয়ে এখনও পরিষ্কারভাবে অবহিত নন নেতারা। সরকারের পাল্টা কৌশল এড়িয়ে আন্দোলনকে গণমুখী ও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতেই এ রাখঢাক। কর্মসূচি চূড়ান্ত করার পর তা বাস্তবায়নের জন্য সতর্কতার সঙ্গে নির্দেশনা পৌঁছানো হবে তৃণমূলে।
জনগণের সম্পৃক্ততায় আন্দোলনে জোর দেয়া হবে ঢাকায়Ñ ফখরুল: জনগণকে সম্পৃক্ত করেই সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই সঙ্গে এবারের আন্দোলনে রাজধানী ঢাকাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী। এ জন্য ঢাকার আন্দোলনের দিকে সবার নজর রয়েছে। তাই ঢাকায় আন্দোলন হতেই হবে। এবারের আন্দোলনে ঢাকা মহানগর নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ থাকবে সবচেয়ে বেশি। আগামী দিনের আন্দোলনকে ঘিরে এবার ঢাকা মহানগরকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঈদ পরবর্তী সরকার পতনের আন্দোলন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা হলে ভালো হয়। অন্যথায় আন্দোলনের বিকল্প কোন পথ নেই। আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করা হবে। সরকারবিরোধী আন্দোলন শান্তিপূর্ণ হবে জানিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, আন্দোলনের বিকল্প নেই। এবারের আন্দোলন তীব্রতর থেকে তীব্রতর হবে। জোট ও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে। তাতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে। এবার তীব্র আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে।
নেতারা জেলে গেলেও আন্দোলন থামবে নাÑ আব্বাস: ওদিকে অপহরণ, খুন, গুম ও গ্রেপ্তারের কথা চিন্তা করেই বিএনপি সরকার পতন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস। সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, দলের নেতাকর্মী সবাই জেলে গেলেও ২০দলীয় জোটের আন্দোলন থেমে থাকবে না। বুধবার দুপুরে মহিলা দলের নেত্রীরা তার শাহজাহানপুরের বাসায় ঈদের শুভেচ্ছা ও আহ্বায়ক হওয়ায় অভিনন্দন জানাতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। মহিলা দলের সভাপতি নূরে আরা সাফা ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানার নেতৃত্বে মহিলা দলের শতাধিক নেতাকর্মী তার বাসায় যান। মির্জা আব্বাস বলেন, আন্দোলন হবে অহিংস এবং শান্তিপূর্ণ। তবে সরকার বাধা দিলে সেটা সহিংস রূপ নিলে তার দায়-দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। তিনি  বলেন, আগের বার যেমন আমার বাসায় হামলা করা হয়েছিল। এবার সে রকম কিছু চিন্তা করলে জনগণ তার সমুচিত জবাব দেবে। আর আন্দোলন নতুন কিছু নয়, প্রক্রিয়াধীন। খুন, গুম, অপহরণ ও গ্রেপ্তারের কথা মাথায় রেখেই আন্দোলনের প্রক্রিয়া এখনও স্পষ্ট করা হচ্ছে না। আব্বাস বলেন, সরকার অতীতে যে ভুল করেছে, তা এবার করবে না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সরকার সম্মান দেখাবে। দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ যাদের পাশে রয়েছে আশা করি সরকার তাদের প্রতি সমর্থন জানাবে। দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সবাইকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
আগের কমিটি পুরোপুরি ব্যর্থÑ হান্নান শাহ: ওদিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার (অব.) হান্নান শাহ বলেছেন, ঢাকা মহানগর আগের কমিটির উপর যে অর্পিত দায়িত্ব ছিল তারা তা সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি। তারা দলকে সংগঠিত করতে পারেনি। এটা তাদের ব্যর্থতা। ঈদের পরদিন এক বেসরকারি টেলিভিশনে তিনি একথা বলেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেছেন, যেই কমিটি ছিল তাদের দায়িত্ব নিয়ে নানা কথা উঠেছে। তবে নতুন কমিটি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে তা সাময়িক। আন্দোলনের জন্য নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করা ও এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনই এখন নতুন কমিটির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন