বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০১৪

আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা// বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোর ঘুঁটি সাজাতে ব্যস্ত সরকার

শোকের মাস আগস্টে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীকে মাঠেই নামতে দেবে না আওয়ামী লীগ। এজন্য মাসজুড়েই আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল ও বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়েছে দলটিযাযাদি রিপোর্ট বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সরকার। আন্দোলনের নামে যাতে কোনো ধরনের নাশকতা না হয় এজন্য একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাকেও মাঠে নামানো হয়েছে।
গোয়েন্দারা ইতোমধ্যে ঢাকা মহানগরে থানাভিত্তিক তালিকাও প্রস্তুত করেছেন। আর এ তালিকা ধরেই মাঠে কাজ করছে গোয়েন্দা সংস্থা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী নাশকতা জনগণই মোকাবেলা করবে। তারপরও জানমালের নিরাপত্তা দেয়া যেহেতু পুলিশের কাজ এজন্য পুলিশও পর্যাপ্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। নাশকতা করতে চাইলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।
তালিকার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, নাশকতায় সম্পৃক্তদের তথ্য সংগ্রহে ইতোমধ্যে গোয়েন্দারা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন।
গোয়েন্দা সূত্রমতে, ঢাকা মহানগরে আন্দোলন প্রতিহত করার লক্ষ্যে থানায় থানায় তিন ধরনের তালিকা হয়েছে। প্রথম তালিকায় সক্রিয় সংগঠক ও অর্থ জোগানদাতা হিসেবে রয়েছে বিএনপি নেতাদের নাম। দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে বোমা প্রস্তুতকারী ও বোমা হামলাকারীদের নাম। তৃতীয় তালিকায় আছে কারাবন্দি, জামিনে মুক্ত ও পলাতকদের নাম।
সূত্রমতে, সমপ্রতি গঠিত বিএনপির মহানগর কমিটি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বেশকিছু নেতার নামও তালিতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কারণ ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি। এর বাইরে একটি বিশেষ তালিকা তৈরি করছে গোয়েন্দারা। যেখানে বিএনপির শরিক ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের নাম রয়েছে।
সূত্র জানায়, বিএনপির আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেই শুরু হবে গ্রেপ্তার অভিযান। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, বিএনপি নেতাদের নামে তালিকা তৈরি হয়নি। যারা পেশাদার বোমাবাজ ও নাশকতাকারী শুধু তাদেরই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
জানা গেছে, বিএনপি, জামায়াত, যুবদল, ছাত্রদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের যেসব নেতার নামে একাধিক মামলা রয়েছে, যেসব নেতা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন তাদেরও থানাভিত্তিক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সূত্রের দাবি, বিএনপি জোট আন্দোলন শুরু বা কর্মসূচি ঘোষণা করা মাত্রই এসব নেতাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাবে ডিএমপি। এজন্য তালিকাভুক্ত নেতাদের ঈদের পরদিন থেকেই নজরদারিতে রেখেছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র ও যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম জানান, যারা ইতোপূর্বে বিভিন্ন থানায় নাশকতা করেছে তারা তাদের একটি তালিকা হালনাগাদ করেছেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রতিহত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর যারা নাশকতা করেছে তাদেরই মূলত হালনাগাদ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এ তালিকা আগেও ছিল। এখন শুধু হালনাগাদ করা হয়েছে। যাদের নাম তালিকায় রয়েছে তারা সবাই তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। এদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক নাশকতার মামলাও রয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, রমজান মাসে বিএনপি জোটের সরকার পতনের হুমকির পর থেকেই আন্দোলন মোকাবেলায় সরকার নানা কৌশল নেয়। সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশ প্রশাসনকে পরিকল্পনা মতো ঢেলে সাজানোর কাজও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সেপ্টেম্বরেই হতে পারে ঢাকা মহানগর আ.লীগের কমিটি আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও আন্দোলন মোকাবেলায় সরকারের বিশেষ নির্দেশনা পালন করছে।
সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবেলার বিষয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, বিএনপির আন্দোলন ফাঁকা আওয়াজ দিচ্ছে। তারপরও তারা যদি আবারো বায়তুল মোকাররমে আগুন দিয়ে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে চায় জনগণ বসে থাকবে না। আওয়ামী লীগের নেতারা চুপ থাকবে না।

আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা
এদিকে শোকের মাস আগস্টে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীকে মাঠেই নামতে দেবে না আওয়ামী লীগ। এজন্য মাসজুড়েই আলোচনা সভা, মিলাদ মাহফিল ও নানা কর্মসূচি দিয়েছে দলটি।
কর্মসূচি পালনে নানা দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ লক্ষ্যে গত শনিবার তিনি আওয়ামী লীগ সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠন নিয়ে যৌথসভা করেছেন।
বৈঠকের পর সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎবার্ষিকী পালনের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাসমূহের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
একই সঙ্গে জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সব শাখার নেতাকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি স্মরণ ও পালন করার জন্য অনুরোধ জ্ঞাপন করেছেন।
আওয়ামী লীগের মাসব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৫ আগস্ট শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা ও মিলাদ মাহফিল, ৯ আগস্ট স্বেচ্ছাসেবক লীগের আলোচনা সভা, ১২ আগস্ট আওয়ামী যুবলীগের আলোচনা সভা, এদিকে ১৫ আগস্ট সূর্যোদয়ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সর্বস্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করবে আওয়ামী লীগ। সকাল ৭টায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত ধানম-ির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
এছাড়া ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং নগরীর প্রতিটি শাখা থেকে শোক মিছিলসহ বঙ্গবন্ধু ভবনের সম্মুখে আগমন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল করবে সংগঠনটি। ১৬ আগস্ট আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা করবে। ১৭ আগস্ট ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা, ১৮ আগস্ট জাতীয় শ্রমিক লীগ, ১৯ আগস্ট আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আলোচনা সভা, ২০ আগস্ট বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ, ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ, ২৩ আগস্ট যুব মহিলা লীগ, ২৫ আগস্ট তাঁতি লীগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজে ২৬ আগস্ট স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ৩০ আগস্ট মহানগর আওয়ামী লীগ, ৩১ আগস্ট ছাত্রলীগের আলোচনা সভা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন